 
                                                                                                                                                                                                                                সাত মহাদেশের সাত শ রকম রান্না নামের বইটা থেকে রেসিপি নিয়ে কত কষ্ট করে ‘ইলিশবড়া উইথ চিকেন দোপেঁয়াজা’ রাঁধলাম, তা-ও জীবনে প্রথমবার! অথচ সামান্য একটু মুখে দিয়েই বিকৃত মুখে বলে উঠল, ‘কী রেঁধেছিস এটা? জীবনে এর চেয়ে বাজে রান্না আর কখনো খাইনি। রাঁধতে না পারলে রান্নাঘরে যাস কেন?’ অনেক কষ্টে সেদিন চোখের জল আটকে রেখেছিলাম।
কলেজে ফেয়ারওয়েল। আমার বান্ধরীরা সবাই শাড়ি পরবে। আমিও সেদিন সকাল সকাল উঠে মায়ের কালো কাতান শাড়িটা পরে সাজগোজ করলাম। অথচ এখানেও তার বাগড়া বাঁধানো চাই। ‘কী রে, অন্তত আজকের দিনটা পেতনি না সাজলে হয় না? শেষবারের মতো কলেজে যাচ্ছিস, আজকের দিনটা মানুষ হয়ে যা।’ রাগে-দুঃখে-অপমানে গা জ্বলতে লাগল। অথচ ডিফেন্স করতে পারলাম না।
ছোটবেলা থেকেই টুকটাক লেখালেখি করি। স্কুল-কলেজের সাময়িকীতে আমার লেখা গল্প-ছড়া ছাপাও হয়। হঠাৎ কী মনে হলো, একদিন বেশ আবেগপ্রবণ ছন্দে একটা প্রেমের কবিতা লিখে ফেললাম। কাজী নজরুল ইসলাম বুঝি আমার অবস্থাটা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। ‘পড়বি তো পড় মালীর ঘাড়েই, সে ছিল গাছের আড়েই’। আমার কবিতাটাকে সে ব্যঙ্গ করে পড়তে লাগল আর সবার সামনে আমাকে হাসির পাত্র বানিয়ে ছাড়ল। ওখান থেকে চলে আসার সময় শুধু বললাম, ‘একটা বার মিথ্যা মিথ্যি প্রশংসা করলে কী এসে-যেত?’
সেই ছেলেটিই যখন বলল, ‘তোকে ভীষণ ভালোবাসি রে, পাগলি!’ তখন আমি বললাম, ‘কিন্তু আমি যে সবচেয়ে বাজে রাঁধুনি, শাড়ি পরলে আমাকে পেতনির মতো লাগে, আমার লেখা কবিতা পড়লে সুকুমার রায়ের “কুমড়োপটাশ” ছড়ার কথা মনে পড়ে যায়?’ ওরে গাধা, তখন যদি মিথ্যা করে তোর নামে দু-চারটা ভালো কথা বলেও দিতাম, এখন যে আমি সত্যি বলছি, তা কী করে বুঝতি, বল?’
আনন্দের চোটে ওকে এটাও বলা হয় না যে শব্দটা গাধা না গাধী হবে।
নাদিরা মুসতারী
 






 
 
 
 
0 comments:
Post a Comment